ঢাকা , শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫ , ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সালমান এফ রহমানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা খরায় পুড়ছে চা-বাগান উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা ইফতারিতে দই-চিড়ার জাদু একরাতে দু’জনকে কুপিয়ে হত্যা এলাকায় আতঙ্ক স্বাভাবিক নিত্যপণ্যের বাজার, সংকট সয়াবিনে মামলা থেকে স্বামীর নাম বাদ দেয়ার কথা বলে স্ত্রীকে ধর্ষণ ছেঁউড়িয়ায় শুরু লালন স্মরণোৎসব দোহাজারীতে বাসচাপায় ৩ জন নিহত হেনস্তার পর ছাত্রীকে ফেলে দিলো দুর্বৃত্তরা ৫৬০ মডেল মসজিদ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ভ্যাট দেয় না বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরনের কাপড় টিভি ফ্রিজ খাট টাকা সব পুড়ে শেষ বস্তিতে আগুন ঢাকা মেডিকেলের আউটডোরে চিকিৎসা বন্ধ পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধির রেকর্ড ঠাকুরগাঁও হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়া শিশু গাজীপুরে উদ্ধার মাগুরার সেই শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হাসিনাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ডাক্তার দেখাতে না পেরে রোগীদের বিক্ষোভ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অভিমুখী চিকিৎসকদের পদযাত্রায় বাধা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিলো পুলিশ
বছরজুড়েই চলছে মশার উৎপাত

ঢাকার দুই সিটিতে ডেঙ্গুর ভয়াবহ রূপ

  • আপলোড সময় : ২১-১২-২০২৪ ০১:০৫:৫১ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২১-১২-২০২৪ ০১:০৫:৫১ পূর্বাহ্ন
ঢাকার দুই সিটিতে ডেঙ্গুর ভয়াবহ রূপ
* মশা নিধনে প্রায় ১৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ
* বছর জুড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৯৫ হাজার ৬৩২ জন হাসপাতালে ভর্তি
* তিল ধারণের ঠাঁই নেই ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রোগীর চাপে

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের সরকারি হাসপাতালের ‘তিল ধারণের ঠাঁই নেই’ হচ্ছে না ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রোগীর চাপে। বছরজুড়েই চলছে মশার উৎপাত। মশা মারতে প্রতি বছর বাজেটের শত শত কোটি টাকা খরচ করেছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। মশার উৎপত্তিস্থল খুঁজতে আধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে মশক নিধনে নেয়া হয় নানা পদ্ধতি। মশা মারতে তারা এক সময় রাজধানীর বিভিন্ন খাল, নালা ড্রেনসহ বিভিন্ন জলাশয়ে ব্যাঙ ছাড়ে। জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য কাজে লাগিয়ে ব্যাঙগুলো পানিতে ভাসতে থাকা মশার লার্ভা খেয়ে ফেলবে। সে লক্ষ্যে ছাড়া হয়েছিল হাঁসও। ধারণা করা হয়েছিল, সেসব স্থানে মশা আর বংশবিস্তার করতে পারবে না। এ ছাড়া জিঙ্গেল বাজিয়েও মশা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। অথচ দুই সিটির এত সব উদ্যোগ ভেস্তে যায়।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে মশা নিধনে প্রায় ১৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু কোনো কিছুতেই প্রতিরোধ করা যায়নি মশার।
মশার উৎপাত আর ডেঙ্গুর ভয় নিয়ে রাজধানীর বনশ্রীর বাসিন্দা শারমিন আক্তার বলেন, এবার সারা বছর মশার উৎপাত ছিল। সিটি কর্পোরেশনের এত এত বরাদ্দ, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ ছাড়া সারা বছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। সিটি কর্পোরেশন এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। আমার বেশ কয়েকজন স্বজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। আমরা নগরবাসী সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রমের ওপর বিরক্ত ও হতাশ। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তারা কিছুই করতে পারেনি।
একই ধরনের অভিযোগের কথা জানান মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, বাসায় শিশুসন্তান আছে। তাই কয়েল বা অ্যারোসল ব্যবহার করতে পারি না। দিন-রাত সবসময় মশারি টানিয়ে রাখতে হয়, যদি ডেঙ্গু হয়। অথচ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশনকে সেভাবে কোনো কাজ করতে দেখিনি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৯৫ হাজার ৬৩২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ২০ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৬ দশমিক ৮০ শতাংশ নারী। একই সময়ে মারা গেছেন ৫২২ জন, যাদের মধ্যে ৫১ দশমিক ৭০ শতাংশ নারী এবং ৪৮ দশমিক ৩০ শতাংশ পুরুষ।
বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতে রাজধানীর অলিগলি ও প্রধান প্রধান সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যায়। বৃষ্টি একটু দীর্ঘ সময় স্থায়ী হলে রীতিমতো ‘ডুবে যায়’ ঢাকা শহর। হাঁটু ও বুকসমান পানিতে নাকাল হতে হয় নগরবাসীকে। অথচ জলাবদ্ধতা নিরসনে বহু প্রকল্প ও পদক্ষেপ হাতে নিয়েছিল ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। ফলাফল যেন শূন্যই থেকে যাচ্ছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে দুই সিটি কর্পোরেশন প্রায় ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) জলাবদ্ধতা নিরসনে সরাসরি ৯০ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখে। এ ছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের (খাল, জলাশয় ও নর্দমা পরিষ্কার) জন্য ৩০ কোটি টাকা, খাল-পুকুর ও জলাশয় পুনরুদ্ধারে আরও দুই কোটি টাকা এবং পানির পাম্প ক্রয় ও স্থাপনে আরও এক কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। সেই টাকা খরচ করার পরও এ বছর জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নেয়।
অন্যদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জলাবদ্ধতা নিরসনে পাম্প হাউজের যন্ত্রপাতি আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও ক্রয়ে বরাদ্দ রাখে ২৫ কোটি টাকা। খালের উন্নয়ন, সীমানা নির্ধারণ ও বৃক্ষরোপণে বরাদ্দ রাখে আরও ৩৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া নর্দমা পরিষ্কারে ১১ কোটি, খাল পরিষ্কারে পাঁচ কোটি, খাল-কালভার্ট মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে ১০ কোটি, পাম্প হাউজ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে আট কোটি, লেক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখে তারা। এত টাকা খরচ করেও ফলাফল ছিল শূন্য। ফলে এ বছরও জলাবদ্ধতার কলঙ্কের দাগ দূর করতে পারেনি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন।
এক সময় রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব ছিল ঢাকা ওয়াসার। পরে রাজধানীর সব নালা ও খাল দুই সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে ঢাকা ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থা গত ১৫ বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করলেও সমস্যা যেন নগরবাসীর পিছু ছাড়ছে না।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা বিদেশে পালিয়ে যান। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলররাও আত্মগোপনে চলে যান। মেয়রদের অপসারণ করে প্রশাসক বসানো হয়। অপসারণ করা হয় কাউন্সিলরদেরও। পরে সিটি কর্পোরেশন পরিচালনায় দু’টি কমিটি গঠন করা হয়।
ডিএনসিসি ও ডিএসসিসিতে সবমিলিয়ে ১৭২ জন কাউন্সিলর ছিলেন। সেখানে বর্তমানে দুই সিটি কর্পোরেশন পরিচালনার জন্য দুই কমিটির ৫০ জন, আঞ্চলিক কর্মকর্তা ২০ জনসহ ৭০ জন সরকারি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ওয়ার্ডগুলোতে প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে সংশ্লিষ্ট সচিবরা দায়িত্ব পালন করছেন।
অভিযোগ উঠেছে, বাড়তি দায়িত্ব ও লোকবলের সংকটের কারণে সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়ছেন নগরবাসীরা। বিশেষ করে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনসহ বিভিন্ন সনদ নিতে এসে বেগ পেতে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের। এ ছাড়া নিয়মিত মশক নিধন ও বর্জ্য অপসারণসহ সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে মেয়র-কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতিতে।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর ডেঙ্গু আক্রান্তের যে তথ্য দেয় সে অনুযায়ী আমরা রোগীর বাসার আশপাশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করি। বছরজুড়েই আমাদের মশক নিয়ন্ত্রণ, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চলমান থাকে। তবে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীর যে সংখ্যা, সেটি কিন্তু আসল চিত্র নয়। কারণ, ঢাকার বাইরে থেকেও ডেঙ্গু রোগী এখানকার হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হন। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা ইতোমধ্যে দক্ষিণ সিটির আওতাধীন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও থানায় চিরুনি অভিযান পরিচালনা করে মশার ওষুধ ছিটানোসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এদিকে, ডিএনসিসির প্রশাসক মাহমুদুল হাসান বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা ও তদারকি করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা এটা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। বছরের শেষের দিকে এসেও অনেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা ও তদারকি আরও জোরদার করতে হবে আমাদের। পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে নিজেদের বাসাবাড়ি ও আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স